প্রধান পাতা

শেষ পর্যন্ত ডিজে নেহার হাঁড়ির খবরটা ফাঁস হয়েই গেলো


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

বিচ্ছিন্নতা। দূরত্ব। জন্মের পর থেকেই এতে অভ্যস্ত হয়েছে ফারজানা জামান নেহা। মা-বাবার মধ্যে দূরত্ব দেখে দেখেই বড় হয়েছে। মায়ের সঙ্গে থাকতো নেহা। আত্মীয়দের আর্থিক সহযোগিতায় দিনাতিপাত করতে হতো। এভাবে অভাব-অনটনের মধ্যে বড় হতে থাকে। তখনও লাইনচ্যুত হয়নি।

প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে পড়াকালীন ছিল ভিন্ন এক নেহা। কম কথা বলতো। বন্ধু ছিল হাতে গোনা। ছিল মায়ের বাধ্য মেয়ে। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে ওঠার পরই পড়ালেখার খরচের সঙ্গে বাড়তে থাকে অন্যান্য চাহিদা। যেটা তার মায়ের একার পক্ষে পূরণ করা সম্ভব ছিল না। বিলাসী জীবনের হাতছানি তাকে টেনে নেয় অন্ধকারে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুই বোনের মধ্যে নেহা বড়। তার বাবা নুরুজ্জামান রাজধানীর পুরান ঢাকার একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তার নিজস্ব কাপড়ের ব্যবসা রয়েছে। নেহার জন্মের পর থেকেই তার বাবা-মায়ের মধ্যে দূরত্বের শুরু। নেহার ছোট বোন জন্মের পর তা আরও বড় আকারে রূপ নেয়। এক সময় তারা মিউচ্যুয়াল ডিভোর্স নিয়ে পরস্পর আলাদা বসবাস শুরু করেন। গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরাতে হলেও নেহা এবং তার ছোট বোন মায়ের সঙ্গে ঢাকার মিরপুরের ভাড়া বাসায় থাকে। মাঝেমধ্যে বাবার আজিমপুরের বাসায় বেড়াতে যেতো। শৈশবে নেহা ছিল শান্ত প্রকৃতির।

সূত্র জানায়, মায়ের সঙ্গে মিরপুরের বাসায় থাকলেও তার বাবা মাঝে-মধ্যে দুই মেয়ের খরচ বাবদ কিছু টাকা দিতেন। সেটাও অনিয়মিত। নেহার মায়ের পরিবারের আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতায় চলতো তাদের সংসার। হতাশা পেয়ে বসে নেহাকে। বন্ধুদের কাছ থেকে ভাগাভাগি করে মাদক ব্যবহার থেকে সূচনা হয় তার পথহারা জীবনের। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর এক বান্ধবীর সহযোগিতায় সর্বপ্রথম রাতের একটি পার্টিতে অংশ নেয় সে। এ সময় নেহার সাদামাটা এবং সরল মুখ দেখে তার সঙ্গে পরিচিত হতে এগিয়ে আসেন এক ব্যবসায়ী। পরবর্তীতে কথা বলে ভালো লাগায় এবং সুন্দর সময় উপহার দেয়ার জন্য তাকে কিছু টাকা বকশিশ দেন ওই ব্যবসায়ী। কোনো পরিশ্রম ছাড়াই এভাবে একসময় টাকার নেশায় পড়ে যায় নেহা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, পার্টি থেকে ফিরে বান্ধবীর পরামর্শে সে নিজেকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করে। তার হালকা কোঁকড়ানো চুল সোজা করা থেকে শুরু করে ত্বকের গ্ল্যামার বৃদ্ধিতে বিশেষ নজর দেয়।

সূত্র জানায়, মেয়ের এই হঠাৎ পরিবর্তন তার মায়ের চোখে ধরা পড়লেও অর্থনৈতিক কারণে এড়িয়ে যেতেন। প্রথমদিকে রাত করে বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নিলে নেহার মা জানতে চাইতেন কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে যাচ্ছে। এক সময় নিজের অসহায়ত্বের কারণে এবং মেয়ের চাহিদা পূরণ করতে না পারায় তার মা হাল ছেড়ে দেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল জগতে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হতে থাকে তার। প্রথমে কথা বলা এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন জাঁকজমকপূর্ণ পার্টিতে অংশ নিতো নেহা একাই। নানা উপায়ে মনোরঞ্জন করতো পার্টিতে অংশ নেয়া ব্যবসায়ীদের। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে নেহার ভার্চ্যুয়াল এবং প্র্যাকটিক্যাল জগতের বিচরণ। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও টাকার নেশায় সেটা নিয়মিত করেনি নেহা। তার ব্যক্তিগত খরচ থেকে শুরু করে মাকেও আর্থিকভাবে সহায়তা করতো নেহা। কিছুটা হলেও সচ্ছলতা ফিরে আসে তাদের তিন মা-মেয়ের সংসারে।

এদিকে নেহা তার আয়ের পরিধি বাড়াতে নিজস্ব গ্রুপে যুক্ত করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া নতুন নতুন তরুণীদের। এভাবে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন বিভাগে গড়ে তোলে তার নিজস্ব নেটওয়ার্ক। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের মনোরঞ্জন এবং চমক দিতে কিছুদিন পরপরই যোগান দিতো নতুন তরুণীদের। যাদের কেউ সদ্য রাজধানীতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, ব্যবসার পরিধি বাড়ার কারণে একসময় নেহা তার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেয় তারই চাচাতো ভাই সাফায়েত জামিল ওরফে বিশালকে। পারিবারিকভাবে অসচ্ছল এবং মাদকাসক্ত হয়ে জামিলও একসময় জড়িয়ে পড়ে নেহার অন্ধকার জগতের চক্রে।

সূত্র জানায়, প্রায় দেড় বছর আগে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নেহার সঙ্গে পরিচয় হয় এক লন্ডন প্রবাসীর। পরবর্তীতে তারা নিজেরা অনানুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করলেও সেটা আলোর মুখ দেখেনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নেহার স্বামী তাকে লন্ডন নিয়ে যেতে চাইলে একসময় সেও যেতে সম্মত হয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলে আইএলটিএস কোর্সে ভর্তি হয়। কিন্তু কোর্সটি সম্পূর্ণ করেনি নেহা। এক সময় তার স্বামীর সঙ্গে শুরু হয় দূরত্ব। বর্তমানে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই নেহার। এভাবেই শুরু হয় নেহার ডিজে পার্টি, সিসাবার, ইয়াবা এবং অসামাজিক কর্মকাণ্ডের। পরিচিতি পায় ডিজে নেহা হিসেবে।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ বলেন, উত্তরার একটি রেস্টুরেন্টে মাদ্যপানে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বর্তমানে নেহা পাঁচদিনের পুলিশি রিমান্ডে রয়েছে। রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে তোলা হতে পারে। এই মামলায় গ্রেপ্তারকৃত অন্য তিন আসামি রায়হান, তাফসির এবং সাফায়েত বিশাল বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছে।