জাতীয়

সম্পদ বিক্রির তোড়জোড় ওসি’র, রুখে দিল দুদক


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

একেতো ‘অবৈধ’ সম্পদ। তার উপর এসব সম্পদ ভোগ দখল করায় আটকে আছেন দুদকের মামলার জালে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এসব সম্পদ বিক্রির তোড়জোড় শুরু করেছেন অভিযুক্ত দম্পতি। তাঁরা হলেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার সাবেক ওসি মো. শাহজাহান ও তার স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তার।

মরিয়া হয়ে চেষ্টার পরও আলোচ্য দম্পতি এসব সম্পদ বিক্রিতে ব্যর্থ হয়েছেন। ইতিমধ্যেই এই দম্পতির সব সম্পদ জব্দের উদ্যোগ নেয় দুদক। অন্যদিকে, আদালতও শাহজাহানের স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তারের নামে থাকা সব সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে রিসিভারও নিয়োগের কথা জানায়।

এর আগে গত ২৮ জুলাই চট্টগ্রামের সাবেক দাপুটে এ ওসি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ওসি দম্পতির বিরুদ্ধে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৩৪ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং ১ কোটি ৪৮ লাখ ৪ হাজার ৪১৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনেন মামলার বাদী দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক মো. আতিকুল আলম। যা পরবর্তীতে তদন্তের জন্য দুদকের একই কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

দুদক সূত্রে জানা যায়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনাকালে ওসির স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তারের নামে থাকা নগরীর লালখান বাজারের হাই লেভেল রোডের ‘পরশ মঞ্জিল’ নামে গড়া দুই গন্ডা দুই কান্তি ৪ দন্তক জায়গার উপর ৬ তলা বাড়ি এবং কক্সবাজারের সদর থানাধীন ঝিলংজা মৌজার বর্থিত পৌরসভায় ৪ কাঠা ভিটে ভূমি বিক্রির তোড়জোর শুরু করেন আসামিরা। যার প্রেক্ষিতে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম গত ৩০ আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে এসব সম্পত্তিসহ ফেরদৌসি আক্তারের নামে থাকা অন্যান্য সম্পদ অবরুদ্ধ করার এবং ক্রোক করার আবেদন করেন।

পরে আদালত ১ সেপ্টেম্বর আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেন। চট্টগ্রাম সিনিয়র স্পেশাল জজ বেগম জেবুন্নেসার আদালত এ আদেশ দেন।

আদালতে আবেদন সূত্রে জানা যায়, ওসি শাহজাহান ও তার স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তারের নামে থাকা লালখান বাজারের ৬ তলা বাড়িটির মূল্য ধরা হয় ৮৬ লাখ ২১ হাজার ৭৩৪ টাকা। যদিও বর্তমান বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া কক্সবাজারের ৪ কাঠা জমির ক্রয় মূল্য ৬০ লাখ ৩১ হাজার টাকা হলেও বর্তমানে ওই সম্পদের মূল্যও কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা দুদকের। এ দুই সম্পদ ছাড়াও ফেরদৌসী আক্তারের নামে থাকা সৌদিয়া পরিবহনের নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রোডে চলাচল করা চট্টমেট্রো-ব-১১-০০৪৮ এবং চট্টমেট্রো-ব-১১-০১৩৯ নম্বরের দুটি যাত্রীবাহী বাসও জব্দ করার নির্দেশ দেন আদালত। যার মূল্য ধরা হয় ১০ লাখ টাকা।

এছাড়া নগরীর ওয়াসার মোড়ের শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে ফেরদৌসি আক্তারের হিসাব নম্বরে থাকা ৩ হাজার ৮৩৭ টাকাও জব্দ করার আদেশ দেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদুল হক মাহমুদ পূর্বকোণকে বলেন, ওসি শাহজাহানের স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তারের নামে যেসব সম্পদ রয়েছে, তা যেন হস্তান্তর না করতে পারে, সে বিষয়ে আদালতে আবেদন করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্পদগুলো অবরুদ্ধ এবং ক্রোক করার আদেশ দেন। ইতোমধ্যে এসব সম্পদ রিসিভার নিয়োগের কার্যক্রমও চলছে।

অবৈধ অর্থ বৈধ করতে স্ত্রীর নামে পোল্ট্রি ও মৎস্য খামার ! :
২০১৫-১৬ করবর্ষ থেকে ২০১৯-২০ করবর্ষে ফেরদৌসি আক্তার পোল্ট্রি খামার ও মৎস্য খামার থেকে সর্বমোট ২ কোটি ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৭৩৫ টাকা আয় করেন বলে তাঁর আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করেন। অথচ দুদকের অনুসন্ধানে আলোচ্য ব্যবসা সম্পর্কিত শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স ব্যতিত অন্য কোন কাগজপত্রই দেখাতে পারেননি তিনি। শুধু তাই নয়, মৎস্য খামার এবং পোল্ট্রি খামারে মিটার সংযোগ থেকে শুরু করে অদ্যাবধি যাবতীয় কাগজপত্র এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, খামারের লেনদেন সংক্রান্ত কোন ব্যাংক স্টেটমেন্ট কিংবা মালামাল ক্রয় অথবা বিক্রয় সংক্রান্ত কোন চালান বা বিল ভাউচার সংক্রান্ত কোন প্রামাণ্য রেকর্ডপত্রও দেখাতে পারেননি ওসির স্ত্রী।

দুদক বলছে, মূলত স্বামী ওসি শাহজাহানের সহযোগিতায় এবং স্বামীর ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থকে বৈধ করতেই স্ত্রীর নামে পোল্ট্রি ও মৎস্য খামারের ট্রেড লাইন্সেন দেখানোর ফন্দি করেন তারা। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোন নথিপত্র কিছুই উপস্থাপন করতে পারেননি ওসি দম্পতি।