জাতীয়

‘সৌন্দর্য শেষ হলেই কিডনি-চোখ বিক্রি করে দেয় ওরা’


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

‘সাতক্ষীরায় নেওয়ার পর নাগিন সোহাগ ও কাল্লু আমাকে বিল্লালের হাতে তুলে দেয়। বর্ডার পার করতে ওরা যখন আমাদের নৌকায় তুলে তখন মাঝির কাছে থেকে মোবাইল নিয়ে আমি আম্মুকে কল করে আমাকে বাঁচাতে বলি’।বিল্লাল সীমান্ত পার করে আমাদের জঙ্গল দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যায়। পরে আলী নামে অন্যজনের কাছে তুলে দিয়ে বিল্লাল চলে যায়। আলী কলকাতা থেকে বাসে করে আমাকে নিয়ে যায় শিলিগুড়ি। সেখান থেকে কিশানগঞ্জের পাঞ্জিপাড়ার নজরুলের বাসার একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে ওরা। ’ 

‘জায়গায়টা ভালো না বুঝেই আমি একবার সেখান থেকে পালিয়ে যাই। কিন্তু ওরা আমাকে ধরে ফেলে। ফিরিয়ে এনেই শুরু করে বকাবকি ও মারধর। মারধরের কারণে আমি দু’দিন অসুস্থ ছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে বের হতে পারিনি। কান পেতে ওদের (পাচারকারী) কথা শুনেছি, যাদের (মেয়ে) সৌন্দর্য ও যৌবন শেষ হয়ে যায়, তাদের কিডনি, চোখ হার্টসহ বিভিন্ন অঙ্গ বের করে বিক্রি করে দেয়। এরপর তাকে মেরে ফেলে। তিন মাস পর মা ভারতের কিশানগঞ্জের স্থানীয় চেয়ারম্যান ও পুলিশের সহায়তায় ওই জাহান্নাম থেকে আমাকে উদ্ধার করে। গাড়িতে ওঠার সময় আমাদের বস্তির পরিচিত এক মেয়েকে সেখানে দেখেছি। তবে কিছু বলতে পারিনি। ’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন-মানবপাচারকারী একটি চক্রের খপ্পরে পড়ে ভারতের নিষিদ্ধ পল্লীতে বিক্রি হওয়া ভুক্তভোগী এক কিশোরী (১৮)। গত ১৫ জানুয়ারিতে সাতক্ষীরা এলাকায় বিউটি পার্লারে চাকরি দেওয়ার কথা বললে, কিশোরীর প্রতিবেশী এক মামা নাগিন সোহাগ ও কাল্লুর সঙ্গে বাসা থেকে পালিয়ে যায় সে। কিন্তু সেখানে চাকরি দূরের কথা সাতক্ষীরায় সীমান্ত এলাকায় নিয়ে কিশোরীকে বিল্লাল নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয় কাল্লু ও সোহাগ। সেখান থেকে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য বিল্লাল এ কিশোরীসহ আরও তিনটি মেয়েকে অবৈধভাবে পাচার করে দেয় ভারতের নিষিদ্ধ পল্লীতে।  

এদিকে, ভারতে পাচার হওয়া মেয়েকে উদ্ধার করতে নিজের পরিচয় গোপন করে কৌশলে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য নাগিন সোহাগ ও কাল্লুর কাছে চাকরির সন্ধান করে ওই কিশোরীর মা। ফেব্রয়ারিতে নাগিন সোহাগ ও কাল্লু একইভাবে ভুক্তভোগী কিশোরীর মাকেও ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। চক্রটি একই পথে অবৈধভাবে তাকেও নিয়ে যায় ভারতের নিষিদ্ধ পল্লীতে। তবে মানবপাচারকারী ওই চক্রের সদস্যদের হাত থেকে মা খুব কষ্টে পালিয়ে যায়। এরপর মেয়েকে খুঁজে পেতে তিন মাস ধরে কলকাতার অলিগলি, কখনও দিল্লির অলিগলি চষে বেরিয়েছেন। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ (পশ্চিম দিনাজপুর) ও বিহারের সীমান্তবর্তী এলাকা কিশানগঞ্জের পাঞ্জিপাড়ার নিষিদ্ধ পল্লী থেকে মেয়েকে উদ্ধার করেন সাহসী এ মা।

উদ্ধারের পর বাংলাদেশে ফিরে আসার সময় ভারত সীমান্তে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) সদস্যরা তাদের ধরে ফেলে। পরে   সম্পূর্ণ ঘটনাটি খুলে বললে বিএসএফ সদস্যরা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে যোগযোগ করেন। এরপর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের বিজিবির কাছে হস্তান্ত করে বিএসএফ।

মেয়েকে উদ্ধার করে দেশে ফিরে আসার পর রাজধানীর পল্লবী থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশের সহযোগিতা পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী এ পরিবারটি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আ স ম মাহতাব উদ্দিন জানান, অভিযোগপত্র ডিসি কার‌্যালয়ে দিয়ে রিসিভ করিয়ে নিয়ে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলে তো হবে না। এ বিষয়ে কেউ আমার সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। আমি কোনো অভিযোগ পাইনি। যদি তারা অভিযোগ ডাকে পাঠায়, তবে সেই অভিযোগ ডাকেই চলে গেছে। আমাকে অভিযোগ জানাতে হবে। নয়তো আমি কীভাবে ভুক্তভোগীর পাশে থাকবো।

শাহপরান বস্তিবাসীর অভিযোগ, নাগিন সোহাগ ও কাল্লু সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে। তারা শাহপরান বস্তির অন্তত অর্ধশত কিশোরী ও নারীকে ভারতে অবৈধভাবে পাচার করেছে।  

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, মানবপাচার চক্রের সদস্য নাগিন সোহাগ ও কাল্লু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আটক রয়েছে। তবে, এ চক্রের অন্য সদস্যরা এখন পলাতক রয়েছে।

পাচারের শিকার কিশোরী জানান, আমার ইচ্ছে ছিল, পড়াশোনা করবো, ভালো একটা চাকরি করবো, ছোট ভাই-বোনদের মানুষ করবো। তারপর বিয়ে করবো। কিন্তু মা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলে। কিন্তু আমি বিয়ে করতে চাইছিলাম না। তাই নাগিন সোহাগের কথায় পড়ে আমি পালিয়ে যাই। তখন আমি বুঝিনি যে ওরা আমাকে খারাপ জায়গাতে বিক্রি করে দেবে।