জাতীয়

স্কুলে করোনা সংক্রমণ, যা বলছে সরকার


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

ঠাকুরগাঁও ও মানিকগঞ্জের কয়েকটি স্কুল মিলিয়ে মোট ১৪ শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সামাজিক মাধ্যমেও বিভিন্ন স্কুলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সঙ্গে স্কুলে আসা যাওয়ার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

শিক্ষামন্ত্রী দিপুমনি জানিয়েছেন, সামাজিক মাধ্যমে অনেকে বিভিন্ন স্কুলে করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য দিলেও বাস্তবে অনুসন্ধান করে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রতিটি ঘটনা আমলে নিয়ে সরকার তদন্ত করে দেখছে। কেউ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগও গ্রহণ করেছেন তারা।

ঠাকুরগাঁওয়ে দুটি স্কুলের ১৩ জন শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এরা সবাই চতুর্থ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তবে পৃথক প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করলেও জেলার সরকারি শিশু সদনে তারা একসঙ্গেই থাকে।

একটি বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেছেন, কয়েকটি শিশুর মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখার পর তাদের পরীক্ষা করানো হলে পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তখন ওই শিশু সদনের অন্য শিক্ষার্থীদেরও পরীক্ষা করে দেখা হয়। সতর্কতা হিসাবে এসব শ্রেণির পাঠদান দুই দিন বন্ধ করে রাখা হয়।

বিবিসি বাংলাকে ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন মো. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, ‘কীভাবে এই ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। হয়তো তাদের এক বা দুইজন আগে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু সবাই একই শিশু সদনে থাকার কারণে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।’

তিনি জানান, পরবর্তীতে এসব শিক্ষার্থীর শ্রেণির অন্যদের পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে, তাদের কারও মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। এই শিক্ষার্থীদের আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দুইদিন বন্ধ রাখার পরে আজ আবার এসব শ্রেণির পাঠদান শুরু হয়েছে।

অন্যদিকে মানিকগঞ্জে বুধবার করোনাভাইরাসের উপসর্গ রয়েছে, অষ্টম শ্রেণির এরকম একজন শিক্ষার্থীকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরে মৃত্যু হয়। এই শিক্ষার্থী সর্বশেষ ১৫ই সেপ্টেম্বর শ্রেণিতে এসেছিল বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে তার মৃত্যু হলেও পরীক্ষা না করানোয় আসলে তার কোভিড-১৯ ছিল কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শনিবার তার শ্রেণির অপর শিক্ষার্থীদের নমুনাও পরীক্ষা করানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন মো. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ।

আগের সপ্তাহে একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে পাঠদান বন্ধ রেখে ওই শ্রেণির ৫৮ জন শিক্ষার্থীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তবে তাদের কারও পজিটিভ ধরা পড়েনি। ফলে বৃহস্পতিবার থেকে আবার সেখানে পাঠদান শুরু হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার খবরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। ঠাকুরগাঁও ও মানিকগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন এই বিদ্যালয়গুলো ছাড়াও অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের কোভিড-১৯ টেস্ট করানোর জন্য হাসপাতালে যোগাযোগ করেছেন।

শিক্ষার্থীদের এই উদ্বেগের বিষয়টি উঠে এসেছে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী দিপুমনির বক্তব্যেও। তিনি শনিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘কোনো কোনো জায়গায়, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে আমাকে লিখে পাঠাচ্ছেন, এই স্কুলে এতজন আক্রান্ত, ওই স্কুলে এতজন আক্রান্ত। আমরা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটা জায়গায় অনুসন্ধান করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোথাও সত্যতা পাইনি।’

ঠাকুরগাঁওয়ে শিক্ষার্থীদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বে সঙ্গেই নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেছেন প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনাভাইরাস পাওয়ার খবর পাওয়ার পরেই আমরা নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি। অন্য শিক্ষার্থী কারও মধ্যে কোনো উপসর্গ আছে কিনা সেদিকেও নিয়মিত নজর রাখা হচ্ছে।

তিনি জানান, দেশের সব স্কুলের শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেন তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে করোনাভাইরাস নিয়ে প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা যেন কথা বলেন। সচেতন করার পাশাপাশি তাদের কোন উপসর্গ আছে কিনা, পরিবারের কেউ আক্রান্ত হয়েছে কিনা, ইত্যাদি তথ্য নিয়ে যেন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী দিপুমনি বলেছেন,  দুই একটি ঘটনা ছাড়া মাধ্যমিক পর্যায়ে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নেই। করোনা এমন একটি বিষয় যে কেউ যেকোনো সময় এতে আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং রাখছি। যাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসার কারণে একজন থেকে আরেকজনের সংস্পর্শে এসেই যেন সংক্রমিত না হয়।

শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কোথাও যদি সংক্রমণের ঘটনা ঘটে, সেই ঘটনা নানা জায়গায় হতে পারে। বাড়িতে হতে পারে, আসার পথে হতে পারে, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে একজন থেকে আরেকজনের হতে পারে। আমরা কোথাও কোনো ধরনের খবর পাওয়া মাত্র আমরা যেভাবে যা করার, কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করা বা যা কিছু, আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন যত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, আমরা কোথাও এরকম সংক্রমণ এখনো পাইনি।’’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমরা আবার বন্ধ করে দেবো। কোনো দ্বিধা করব না। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোথাও সেরকম পরিস্থিতি তেমনভাবে উদ্ভব হয়নি। যদি কোথাও হয়, নিশ্চয়ই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’