জাতীয়

স্বামীকে হত্যা করে পাথরচাপা দেয় স্ত্রী, প্রেমিকসহ গ্রেপ্তার


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

সিলেটের জাফলংয়ে পিয়াইন নদীর পাশ থেকে পাথরচাপা দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার করা পর্যটককে হত্যা করেছেন তারই স্ত্রী। স্ত্রীর প্রেমিকই হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেন। বেড়াতে নিয়ে হোটেল রিভারভিউয়ের কক্ষে স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে নদীর পাশে পাথরচাপা দিয়ে পালিয়ে যান তারা।

পুলিশ জানিয়েছে, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ও তার প্রেমিকসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে নিজ কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন।

নিহত আলে ইমরান (৩২) কিশোরগঞ্জের নিকলী থানার গুরই গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে। গত রবিবার স্ত্রী খোশনাহারকে সঙ্গে নিয়ে জাফলংয়ে বেড়াতে এসেছিলেন তিনি। জাফলংয়ের হোটেল রিভারভিউয়ের ১০১ নম্বর কক্ষে ওঠেন তারা।

পুলিশ সুপার বলেন, ‌‘সোমবার (১৭ এপ্রিল) বিকালে জাফলংয়ের বল্লাঘাট এলাকার ওই আবাসিক হোটেল সংলগ্ন নদীর কাছাকাছি স্থান থেকে পাথরচাপা অবস্থায় ইমরানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে তার স্ত্রী খোশনাহার পলাতক ছিলেন। পরদিন গোয়াইনঘাট থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করতে মাঠে নামে পুলিশ। সেই সঙ্গে ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়টি পুলিশের সামনে আসে। বুধবার (১৯ এপ্রিল) রাতে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে খোশনাহার (২১) ও নাদিম আহমেদ নাঈমকে (১৯) গ্রেপ্তার করে।’

গ্রেপ্তার নাদিম খোশনাহারের প্রেমিকের বন্ধু এবং নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার বেলদি গাজীরটেক গ্রামের মো. জিন্নাতের ছেলে। খোশনাহার নিকলী থানার ছেত্রা গ্রামের মৃত আব্দুস ছাত্তারের মেয়ে। নাদিমকে নিজ বাড়ি এবং খোশনাহারকে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রেমিক মাহিদুল হাসান মাহিনকে (২৪) রংপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘ইমরানের সঙ্গে পাঁচ বছর আগে খোশনাহারের বিয়ে হয়েছিল। এরই মধ্যে মাহিদুল হাসান মাহিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান খোশনাহার। তার সঙ্গে আড়াই বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছে। মাহিন ঢাকার একটি কোম্পানিতে জিএম পদে কর্মরত। এরই মধ্যে ইমরানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তারা। বিভিন্ন সময় তাকে হত্যার চেষ্টা করে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় হত্যার উদ্দেশ্যে জাফলংয়ে বেড়ানোর কথা বলে স্বামীকে নিয়ে ১৫ এপ্রিল রাতে ভৈরব থেকে ট্রেনযোগে সিলেটে রওনা হন খোশনাহার। একইদিন মাহিন ও মাহিনের বন্ধু নাদিম এবং অফিসে কর্মরত রাকিব কমলাপুর থেকে ট্রেনযোগে সিলেটে রওনা হন। ১৬ এপ্রিল সকাল ৮টার দিকে হোটেল রিভারভিউয়ে ওঠেন খোশনাহার ও ইমরান। অপরদিকে অন্য তিন জন বল্লাঘাটের হোটেল শাহ আমিনে ওঠেন।’

আবদুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ড ঘটানোর আগে হোটেল কক্ষের সামনের সিসিটিভি ক্যামেরা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেন খোশনাহার। সেই সঙ্গে ওই দিন রাত ১০টার দিকে ইমরানকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন। ঘুমিয়ে গেলে রাত ১২টার দিকে প্রেমিক মাহিন ও সহযোগীদের হোটেলকক্ষে নিয়ে আসেন। রাত ২টার দিকে ইমরানের গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটান খোশনাহার ও মাহিন। এ সময় ইমরানের পা চেপে ধরেন নাদিম। রাকিব কক্ষের দরজায় পাহারা দেন। মৃত্যু নিশ্চিত হলে রাত ৩টার দিকে ইমরানের লাশ হোটেল সংলগ্ন পিয়াইন নদীর পাশে পাথরচাপা দিয়ে রাখেন। রাত সাড়ে ৪টার দিকে হোটেল থেকে বেরিয়ে অটোরিকশাযোগে সিলেট ছেড়ে পালিয়ে যান তারা।’