Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )
রমজান মাসে মুড়ি ছাড়া বাঙালির ইফতার কল্পনা করা যায় না। ইফতারে অন্য আইটেমের কমতি থাকলেও মুড়ি থাকা চাই। কিন্তু বর্তমানে হাতে ভাজা এই মুড়ির বাজার চলে গেছে কল কারখানার দখলে।
আধুনিক যান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষের জীবনমানের অগ্রগতির পথে আজ প্রাচীন ঐতিহ্যের অনেক কিছু বিলুপ্ত প্রায়। এই হারানো ঐতিহ্যে গুলোর মধ্যে অন্যতম হল হাতে ভাজা দেশি মুড়ি। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় ঠাকুরগাঁওয়ে বেশ কিছু কারখানায় মুড়ি উৎপাদিত হওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে সু-স্বাদু হাতে ভাজা দেশি মুড়ি। গত কয়েক বছর পূর্বেও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মহব্বতপুর, হরিনারায়নপুর, গিলাবাড়ি গ্রাম গুলো মুড়ির গ্রাম হিসেবে খ্যাত ছিল। ওই গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই মুড়ি ভাজার ধুম লেগে থাকতো। ‘গীগজ’ ধানের মুড়ি যার খ্যাতি ছিল সর্বত্র। কিন্তু সময়ের প্রেক্ষাপটে যান্ত্রিক কারখানায় তৈরি মুড়ি বাজার দখল হয়ে গেছে। যার ফলে হাতে ভাজা মুড়ি শিল্পের পরিবারগুলোর জীবিকা হুমকির মুখে।
এখনও হাতে ভাজা দেশি মুড়ি তৈরির কাজে নিয়জিত রয়েছেন কিছু নারী ও পুরুষ। তবে কারখানায় উৎপাদিত এলসি মুড়ি সহজলভ্য ও বেশি বাজারজাতকরণের ফলে দেশি হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা একেবারে কম।
হরিনারায়ণপুরের সাবিতা সেন জানান, ‘মুড়ির চাল কিনে বাড়িতে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করি। এরপর লবণ দিয়ে রাখি। তারপর রোদে শুকিয়ে হাতে ভাজতে হয়। মেশিনে যারা মুড়ি ভাজে তারা হাইড্রোস মিশিয়ে মুড়ি বড় ও সাদা করে কম দামে বিক্রি করে। এদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টেকা কষ্টকর।’
সুব্রত চন্দ্র রায় জানান, ‘ঠাকুরগাঁওয়ের বেশির ভাগ মুড়ির চাহিদা হরিনারায়ণপুর ও গিলাবাড়ি থেকে মেটানো হয়। অনেক কষ্টে মুড়ি ভেজে হেঁটে মুড়ি বিক্রি করি। ৩ থেকে ৪ দিন মুড়ি বিক্রি করে লাভ হয় ৪০০ টাকা। প্রতি কেজি মুড়ি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।’
মুড়ি ভাজা ছেড়ে দেওয়া শান্তি বর্মণ বলেন, ‘এক মণ পরিমাণের চালের মুড়ি তৈরি করতে ৬-৭ ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। বর্তমানে ধানের দাম বৃদ্ধি, পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত লাকড়ি ক্রয় ছাড়াও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি মুড়ি উৎপাদনে গড়ে খরচ হয় প্রায় ৬৬ টাকা। হাতে তৈরি মুড়ির রং লালচে হলেও খেতে সুস্বাদু হয়। এছাড়া ২০/২৫ দিন ঘরে রাখলেও এর স্বাদের কোন পরিবর্তন হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে গড়ে ওঠা মুড়ি কারখানায় মুড়ি তৈরি হওয়ায় এখন হাতে তৈরি মুড়ি শিল্প পিছিয়ে পড়ছে। কারখানায় তৈরি মুড়ি দেখতে সাদা ধবধবে হলেও ২ দিন ঘরে রাখলেই চুপসে যায়। এসব মুড়ি খোলা অবস্থায় প্রতি কেজি ৬৫ টাকা এবং প্যাকেটজাতগুলো ৭৫ টাকায় পাওয়া যায়। যা হাতে তৈরি মুড়ির দামের চেয়ে কম। তাই হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে লাভ তো দূরের কথা আসল দামই তুলতে পারেন না মুড়ির কারিগররা।’
মুড়ি শিল্পের কারিগরদের দাবি সরকারের একটু সহায়তা পেলে এই শিল্প বাচাঁনো সম্ভব। কারিগরদের সরকারি ভাতা বা অনুদান দিয়ে হাতে ভাজা মুড়ি সকলকে ক্রয় করতে উৎসাহ্ দিতে হবে এটাই দাবি মুড়ি গ্রামের মানুষগুলোর।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম প্রাচীন ঐতিহ্যে ধরে রাখতে সকলকে হাতে ভাজা সুস্বাদু নিরাপদ পুষ্টিকর মুড়ি খাওয়ার আহ্বান জানান।