প্রধান পাতা

অপহরণে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ‘আম্মা গ্রুপ’র টার্গেট স্কুল শিক্ষার্থীই!


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

‘আম্মা গ্রুপ’ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপের নাম। গহীন বনে রুবেল নামে এক যুবক এ গ্রুপের নেতৃত্ব দিলেও প্রধান হিসেবে কাজ করেন এক রোহিঙ্গা নারী। তাকে সবাই ‘আম্মা’ বলেই ডাকেন। এ গ্রুপের কাজই হলো অপহরণ করা। আর অপহরণের জন্য টার্গেট করে বিভিন্ন স্কুল শিক্ষার্থীদের। তাই ওই গ্রুপে রাখা হয় রোহিঙ্গা কিশোরদের; যাদেরকে বাংলাদেশি ছদ্মবশে স্কুলে ভর্তি করিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের ফাঁদে ফেলে করা হয় অপহরণ। আর পরে পরিবারের কাছে দাবি করে বড় অঙ্কের মুক্তিপণের টাকা।

গেল বছরের ১৭ অক্টোবর ‘আম্মা গ্রুপ’র হাতে অপহরণের শিকার হন টেকনাফের হ্নীলা নয়াবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। চারদিন পরে মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার পরই মুক্তি পায় তারা। 

জানা যায়, ওই স্কুলে মনজুর আলম নামে এক রোহিঙ্গা কিশোর বাংলাদেশি ছদ্মবেশে ভর্তি হয়। বন্ধুত্ব গড়ে তুলে স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। এক পর্যায়ে কয়েকজনকে টার্গেট করে দাওয়াত দেয় বাসায় যাওয়ার জন্য। আর দাওয়াতে গিয়েই অপহরণের শিকার হন ওই দুই শিক্ষার্থী। তাদের অপহরণের পর পরিবারের কাছে দাবি করে মুক্তিপণের টাকা। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা অপহরণকারীদের দিলেই মুক্তি মিলে অপহৃত দুই শিক্ষার্থীর। 

অপহরণের শিকার দুই শিক্ষার্থী বলেন, ‘মনজুর আলম নামে এক রোহিঙ্গা কিশোর বাংলাদেশী ছদ্মবেশে স্কুলে ভর্তি হয়ে। স্কুলে আমরা কেউ জানতাম না সে রোহিঙ্গা। আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে। একদিন তার  ভাইয়ের খৎনার কথা বলে বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমরা যেতে না চাইলে এক পর্যায়ে মনজুর আলমের মোবাইল থেকে একজন নারী ‘মা’ সেজে কথা বলেন। পরে বিশ্বাস করে রাজি হয়ে তার বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়ে আমরা অপহরণের শিকার হয়।’

তারা আরও জানান, ‘অপহরণের শিকারের পরে জানতে পারে মনজুর আলম একজন রোহিঙ্গা। শালবন পাহাড়ে ওই বন্ধুই তাদের উপর চালায় বিভৎস নির্যাতন। পরে পরিবারের কাছে দাবি করে মুক্তিপণের টাকা।

অপহরণের শিকার এক শিক্ষার্থীর বাবা জয়নাল আবেদিন জানান, অপহরণ করার পর অপহরণকারীরা তাদের কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে। ওই সময় পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গেলেও কোন সহযোগিতা পাননি। পরে সাড়ে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পর তাদের সন্তানদের ছেড়ে দেয়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও কিভাবে রোহিঙ্গা কিশোর মনজুর এই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলো— এমন প্রশ্নের উত্তরে টেকনাফের হ্নীলা নয়াবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রূপন কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা জানি না মনজুর আলম রোহিঙ্গা ছিলো। তবে সেই সব কাগজ পত্র বাংলাদেশি নাগরিকত্ব দেখিয়েছিলো; তাই তাকেও স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে। পরে ঘটনার পর তার ভর্তি বাতিল করা হয়েছে।’ তবে রোহিঙ্গা ছাত্র ঠেকাতে এ বছর থেকে বেশ সতর্কতার সঙ্গে ভর্তি কার্যক্রম চালাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। 

এদিকে গত ৭ ডিসেম্বর রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়নের পেঁচারদ্বীপ মাঙ্গালাপাড়া বাতিঘর কটেজ এলাকা থেকে ৪ স্কুল শিক্ষার্থীকে সেন্টমার্টিন বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে অপহরণ করে দুই রোহিঙ্গা কিশোর। পরে তাদের পরিবারে কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা।

অপহরণের শিকার স্কুল শিক্ষার্থীদের পরিবার, র‌্যাব এবং এপিবিএন সেই সময় জানিয়েছিল, পেঁচারদ্বীপের বাতিঘর নামে একটি কটেজে চাকরি করতেন রোহিঙ্গা কিশোর জাহাঙ্গীর আলম ও মো. ইব্রাহিম। একসময় তারা ওই চার স্কুল শিক্ষার্থীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে সেন্টমার্টিন বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে টেকনাফের শালবন পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে অপহরণ করেছিলো। পরে শালবন পাহাড়ে র‌্যাব এবং এপিবিএন তিন দফায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়। এই অপহরণের ঘটনায় ৮ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এ চার স্কুল ছাত্রকেও আম্মা গ্রুপই অপহরণ করেছিল বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাস্পে উদ্বেগজনক হারেই বাড়ছে অপহরণের ঘটনা। গত বছরে ক্যাম্পগুলোতে দেড়শ’রও বেশি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে পাহাড়ে গড়ে উঠছে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ। যারা মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের পাশাপাশি অপহরণেও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে।