জাতীয়

ইউনিয়ন আ.লীগের নেতৃত্বে বিএনপি নেতা!


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বিএনপির রাজনীতি করে আসছেন ২০০৫ সাল থেকে।  

বর্তমানে তিনি ইউনিয়ন বিএনপির উপদেষ্টা পদে আছেন।

কিন্তু হঠাৎ করে কিছুদিন ধরে নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন তিনি।  

উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা তাকে সাহেবের হাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মৌখিকভাবে ঘোষণা দিয়েছেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।  

জানা গেছে, ২০১৯ সালে সাহেবেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে কোনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। তবে কিছুদিন আগে থেকে আবুল খায়ের চেয়ারম্যান নিজেকে সাহেবেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন।

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে চিহ্নিত একজন বিএনপি নেতাকে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আদিষ্ট করতে চান। আর এক সময়ে আওয়ামী লীগ এবং নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া বিএনপি নেতা আবুল খায়ের এখন আওয়ামী লীগের মতো একটি রাজনৈতিক দলকে নিজের ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করছেন। তার হাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আগে। তার স্ত্রী কহিনুর বেগমও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।  

বিএনপি নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সম্প্রতি লিখিত আবেদন করেছেন ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর ছিদ্দিক।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দেওয়া সাহেবেরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের মাস্টার ২০০৫ সালের ৩০ আগস্ট সাবেক রামগতি থানা বিএনপির সদস্য হন। একই বছরের ১৫ আগস্ট চর কালকিনি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। ২০০৯ সালের অক্টোবরে সাহেবেরহাট ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য এবং বর্তমানে তিনি ওই ইউনিয়ন বিএনপির উপদেষ্টা সদস্য হিসেবে আছেন। এছাড়া ইউপি নির্বাচনে তিনি বিএনপির সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৪ ও ২০১৯ সালে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি।  
সাহেবেরহাট ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. লোকমান হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান আবুল খায়ের আমাদের দলীয় নেতা। ইউনিয়ন কমিটির উপদেষ্টা সদস্য। কিন্ত এখন শুনছি তিনি আওয়ামী লীগ করছেন। যা নীতি এবং নৈতিকতার বাইরে। নিজের ব্যক্তিস্বার্থে এবং চেয়ারম্যান পদ ধরে রাখতে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা হতে চাচ্ছেন।

সাহেবেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, যার নেতৃত্বে বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করেছেন, তিনিই এখন আওয়ামী লীগ নেতা। ২০০৯ সালের ইউপি নির্বাচনে তিনি বিএনপির সমর্থন নিয়ে প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হলে আমাকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আবুল খায়ের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েও সীমানা জটিলতা দেখিয়ে নির্বাচন বন্ধের জন্য মামলা করেন। তার কারণে ১২ বছর ধরে এ ইউনিয়নের নির্বাচন বন্ধ আছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগের কিছু নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নিজকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করি।  

কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দিন আজম বলেন, দলের সুনির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র আছে। অন্য দলের কোনো নেতা আওয়ামী লীগে যোগ দিতে হলে প্রথমে তাকে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বরাবর আবেদন করতে হয়। সভা ডেকে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাকে প্রথমে এক বছরের জন্য দলের প্রাথমিক সদস্য পদ দেওয়া হয়। তার রাজনৈতিক কার্যক্রম আশানুরূপ হলে পরে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদের জন্য প্রার্থী হতে পারেন।  

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলেন, বিএনপি নেতা আবুল খায়েরের বেলায় কোনো নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। আমার দিক থেকে আপত্তি ছিল। কিন্তু দলের গুটিকয়েক নেতা একক সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজটি করেছেন। একজন চিহ্নিত বিএনপি নেতা এখন আওয়ামী লীগ নেতা সেজে তার ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করছেন। যার কারণে ইউনিয়নের সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

আবুল খায়ের বলেন, আমি বিএনপি করতাম, তবে কোনো পদে ছিলাম না। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি। উপজেলা আওয়ামী লীগ আমাকে মৌখিকভাবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছে।

কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন মাস্টার বলেন, সাহেবেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে বিকল্প কাউকে পাওয়া যায়নি। যে কারণে আবুল খায়ের চেয়ারম্যানকে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে মনোনীত করা হয়েছে।  

দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকার পরও নেতা তৈরি হয়নি কেন, জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এদিকে তার এমন বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক
সাইফুদ্দিন আজম বলেন, সাহেবেরহাট ইউনিয়নে যদি কোনো নেতা তৈরি না হয়, সে ব্যর্থতা কার? দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায়- কেন নেতা তৈরি হয়নি? দলের সুযোগ সুবিধা যারা নিয়েছেন, তারা কেন নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে পারেননি?

তিনি জানান, সাহেবেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেওয়ার মতো যোগ্য নেতা রয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিস্বার্থে বিএনপি নেতা আবুল খায়েরকে আওয়ামী লীগের পদ দেওয়া হচ্ছে।