চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে শত শত গাড়িতে ‘অনলাইন টিভি’র স্টিকার সেঁটে ট্রাফিক টেন্ডল রাজুর চাঁদাবাজি


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) বর্তমান কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর সেই ২০১৭ সালে চিহ্নিত করেছিলেন যে দুর্বৃত্তের দৌরাত্ম্য, সেই লোকটি এরপরও থেমে থাকেনি। বরং পুলিশের কোনো কোনো কর্মকর্তার যোগসাজশে কখনও তিনি ট্রাফিক পুলিশ, কখনও ট্রাফিকের টেন্ডল (ক্যাশিয়ার), কখনও আবার কথিত ‘অনলাইন টিভি’র চেয়ারম্যান— এমন সব পরিচয়ে বিস্তৃত করেছেন চাঁদাবাজির জাল। নাম তার শাহাদাত হোসেন ওরফে রাজু।

চট্টগ্রামের পশ্চিম মাদারবাড়ি রেলবিট মোড় ও বন্দর থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন জেলায় যাওয়া শত শত পণ্যবাহী পরিবহনকে এই রাজুকে দিতে হয় মাসিক ‘কন্ট্রাক্ট’ হিসেবে নির্দিষ্ট অংকের টাকা। চুক্তি অনুসারে এসব গাড়ির সামনের গ্লাসে লাগিয়ে দেওয়া হয় ভুয়া একটি কথিত ‘অনলাইন টিভি’র স্টিকার। এভাবে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ বন্দর, পশ্চিম ও খুলশী জোন এলাকায় চলছে রাজু ও তার কথিত ‘অনলাইন টিভি’র স্টিকার লাগানো শত শত পরিবহন। জানা গেছে, স্টিকার সাঁটা থাকলে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাও ওই গাড়িগুলোকে আর হয়রানি করেন না।

অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ বন্দর, পশ্চিম ও খুলশী জোনে কর্মরত তিন ট্রাফিক পরিদর্শকের যোগসাজশে এসব অপকর্ম করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন শাহাদাত হোসেন ওরফে রাজু। প্রতিদিন মাঝিরঘাট ও বন্দর থেকে প্রায় দুইশতাধিক পণ্যবাহী গাড়ি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এসব গাড়ির সঙ্গে মাসিক চুক্তি করা হয় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায়। এ চুক্তির পর গাড়িতে দেওয়া হয় রাজুর নিজের নামে পরিচালনা করা এনপ্লাসটিভি ডটকম নামের একটি ভুয়া অনলাইন টিভির স্টিকার। কদমতলী ডিটি রোড ছমনা ম্যানশনের চতুর্থ তলায় এ অনলাইনের আড়ালে এই পরিবহন বাণিজ্য চালানো হচ্ছে।

সরেজমিনে চট্টগ্রামের কদমতলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের কাভার্ডভ্যান, কনটেইনারবাহী লরি, ট্রাকের চালকের সামনের গ্লাসের নিচে একাধিক গাড়িতে এনপ্লাসটিভি ডটকমের স্টিকার লাগানো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নোয়াখালীর জেলার সুধারাম থানার ভাটিরটেক গ্রামের আবদুল মালেকের পুত্র শাহাদাত হোসেন রাজু। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি মহানগর বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের বাসায় ‘সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র ও নাশকতা’র গোপন বৈঠক করার সময় রাজুকে আটক করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। প্রায় তিন মাস কারাভোগের পর সাবেক বন্দর থানার ট্রাফিক পরিদর্শক আবুল কাশেমের ‘টেন্ডল’ বা ক্যাশিয়ার হিসেবে যোগদান করেন রাজু। দীর্ঘদিন আবুল কাশেম ছাড়াও ওই এলাকায় টানা প্রায় ছয় বছর ‘টেন্ডল’ বা ক্যাশিয়ার হিসেবে বিভিন্ন পরিবহন থেকে চাঁদা সংগ্রহের কাজ করতেন তিনি।

২০১৭ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে সিএমপির তৎকালীন অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের (বর্তমান কমিশনার) একটি প্রতিবেদনে টেন্ডল রাজুর দৌরাত্ম্য নিয়ে উঠে আসে ভয়ঙ্কর তথ্য। সবশেষ ২০১৯ সালের ৯ জুলাই চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার ঝর্ণাপাড়া এলাকায় পুলিশের চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে শাহাদাত হোসেন রাজু (৩০) ও সহযোগী মহব্বত আলীসহ (২৮) দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়।

অভিযোগের বিষয়ে শাহাদাত হোসেন রাজু বলেন, ‘আমার টিভির নামে কোনো স্টিকারের চাঁদাবাজি করা হচ্ছে না। আপনি আমাকে প্রমাণ দেখান। তখন বুঝতে পারব।’ কথা বলার একপর্যায়ে নিজেকে এনপ্লাসটিভির চেয়ারম্যান দাবি করে প্রতিবেদককে হুংকার দেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে খুলশী থানার ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) মশিউর রহমান ও বন্দর জোনের পরিদর্শক (প্রশাসন) জসিম উদ্দিনকে মুঠোফোনে কল করা হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে পশ্চিম জোনের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) বিপ্লব বলেন, ‘রাজুর নামে ডবলমুরিং ও পাহাড়তলী এলাকায় গাড়ি চললে ধরে মামলা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া আছে। অবৈধ কোনো গাড়ি আমার এলাকায় চলাচল করার সুযোগ নেই।’

সুত্র: চট্টগ্রাম প্রতিদিন