চট্টগ্রাম

জিইসি থেকে বহদ্দারহাট : ৪ কিলোমিটার সড়কে ৭ অপরাধ


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

নগরীর জিইসি মোড় থেকে বহদ্দারহাট। চার দশমিক এক কিলোমিটারের এ এলাকায় সড়ক ও ফ্লাইওভারে অন্তত সাত ধরনের অপরাধ ঘটছে। তা হলো, জিইসির মোড়ে ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজি, মাদকাসক্তদের উৎপাত, ফ্লাইওভারে সুতা টেনে ছিনতাই, দুই ফ্লাইওভারের মাঝখানে ছিনতাই, বহদ্দারহাটকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি, পরিবহন থেকে পণ্য চুরি, বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সের পাশে ও মদিনা হোটেলের সামনে অটোটেম্পো আর মাইক্রোবাসে চাঁদাবাজি।
অনুসন্ধানে জানা যায়,জিইসির মোড়ের সেন্ট্রাল প্লাজা, পেনিনসুলা, কামাল স্টোর, সামনারওশান সিটি এলাকার ফ্লাইওভারের গা ঘেষে দখল করে আছে ভাসমান হকাররা। সেখানে হকার নিয়ন্ত্রণ, রাস্তা-ফুটপাত দখল ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন জয়নাল, কামাল, আরিফ, সেলিম, পারভেজ, মাসুদ, রিয়াদ, তাহের ও সোহেল। তারা হকার্স ও যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক একাধিক নেতার আশীর্বাদে সড়ক দখল নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা। পুরো এলাকায় ছোট-বড় মিলে অন্তত তিন শতাধিক দোকান, ঝুপড়ি দোকান ও ভ্যান দোকান রয়েছে। দোকান ও জায়গা দখল ভেদে একশ থেকে তিনশ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়। গড়ে দুইশ টাকা হিসাবে দিনে ৬০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়।
জিইসির মোড় থেকে দুই নম্বর গেইট পর্যন্ত সড়ক বেয়ে যেতেই চোখে পড়বে কোথাও দুইজন আবার কোথাও তিনজন’র কিশোর-কিশোরী পলিথিন মুখে লাগিয়ে গাম (রিকশার টিউবের ছিদ্র বন্ধ করার কাজে ব্যবহৃত) টানছে। আবার এসব কিশোর-কিশোরীরাই ফ্লাইওভারের দুই পাশে সুতা টেনে দিয়ে ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করছে। আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার ও বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের মাঝখানে প্রায় সময় জ্বলে না সড়ক বাতি। ওই সুযোগে গাম সেবনকারী কিশোরের দল মাঝে মাঝে সেখানেও ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে।
কিশোর দল ছিনতাই কিংবা মাদক (ড্যান্ডি সেবনকারীদের ভাষায় গাম) সেবন করে তা নয়। তারা মাঝে মাঝে চলমান লং ভেহিক্যাল থেকে লোহা তৈরির কাাঁচামাল স্ক্র্যাপ ও ট্রাক থেকে বস্তা কেটে চালও চুরি করে।
পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (ওসি) জাহেদুল কবির জানান, গাম সেবনকারি ভাসমান শিশু কিশোর নিয়ে আমরা অনেকটা অতীষ্ঠ। তারপরও চোখের সামনে পড়লে তাদের আমরা আটক করি। গত কয়দিনে এ ধরনের ১৫ জন শিশু কিশোরকে আমরা আটক করেছি।
ওসি বলেন, এসব শিশু কিশোরকে আটক করার পর আদালতে নেয়া পরবর্তীতে হাটহাজারী কিংবা গাজিপুর সংশোধানাগারে পৌঁছানো পর্যন্ত সবকিছুই পুলিশকে করতে হয়। এতে যে আর্থিক খরচটা হয় তাও পুলিশকে বহন করতে হয়। সংশোধানগার থেকে আসার পর তারা ফের একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এসব ভাসমান শিশু-কিশোরদের পুনর্বাসন করতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। বাদাম কিংবা অন্য কোন খাবার বিক্রি করতে কয়েকজন কিশোরকে আমরা আর্থিক সহযোগিতাও করেছিলাম। পরে দেখা গেছে তারা ওই টাকা দিয়ে গাম সেবন করছে।
মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন ও কোতোয়ালি মোড় পর্যন্ত চলাচল করে অটো টেম্পো। লাইনম্যান পরিচয় দিয়ে এসব টেম্পো থেকে নিয়মিত চাঁদাবাজি করছে পারভেজ নামে এক ব্যক্তি। তাকে নেপথ্যে সহযোগিতা করছে ফিরোজ নামে একব্যক্তি।
বহদ্দারহাট মদিনা হোটেলের সামনে গড়ে উঠেছে অবৈধ মাইক্রো স্ট্যান্ড। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া লোহাগাড়া পর্যন্ত এসব মাইক্রোবাস চলাচল করে। পূর্ব ষোলশহরের জনৈক ইয়াকুব এসব মাইক্রো থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে। একই জায়গা থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত চলাচল করে অটো টেম্পো। মোহাম্মদ হোসাইন নামে একজন ব্যক্তি এসব টেম্পো থেকে চাঁদা আদায় করে। সেখানে শুধু চাঁদা আদায়ের ঘটনা ঘটে তা নয়। মাঝে মাঝে পথচারীদর কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয় সর্বস্ব।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, হক মার্কেটের সামনে ফুটপাতে বসা হকারের কাছ থেকে চাঁদা তুলতো সোহেল ওরফে ফ্রুট সোহেল। গত ১৪ সেপ্টেম্বর দুই সহযোগী সুমন ওরফে কালা সুমন ও হামিদসহ পাঁচলাইশ থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ফ্রুট সোহেল। বর্তমানে বহদ্দারহাট কেন্দ্রিক ছিনতাই আর চাঁদাবাজির গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে জুয়েল, হামিদ ও ইমন বড়ুয়া।
গত ১ সেপ্টেম্বর ভোর পৌনে পাঁচটায় জিইসির মোড় এলাকায় আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার থেকে নিচে পড়ে মারা যায় আকবর হোসাইন নামে এক যুবক। পরে জানা যায় আকবর জগন্নাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র। তবে তার মৃত্যুর কারণ এখনো অজানা।
জানতে চাইলে খুলশী থানার পরিদর্শক (ওসি) শাহীনুজ্জামান জানান, এখনো মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। আমরা ওইদিনের ঘটনায় কিছু ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি। যেখানে তাকে একা একা ফ্লাইওভারে উঠতে দেখা গেছে। তার মুঠোফোনে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সব ধরনের তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে। মুঠোফোনটি সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। মুছে যাওয়া তথ্যগুলো উদ্ধার করতে পারলে হয়তো তার মৃত্যুর একটি ক্লু পাওয়া যাবে এমনটি আশা করছি আমরা।