চট্টগ্রাম

বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে খাল-নালায় বর্জ্য পেলেই ব্যবস্থা


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

খাল-নালা পরিষ্কার করার কয়েকদিনের মধ্যে আবারো ভরাট হয়ে যায়। ভরাটের উপকরণের বেশিরভাগই গৃহস্থালী বর্জ্য, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালামাল ও পলিথিন। তাই যারা এসব পণ্য খালে ফেলেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনের খাল-নালায় মালামাল পাওয়া যাবে এবং যদি প্রমাণ হয় ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল ফেলা হয়েছে তাৎক্ষণিক ওই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হবে। একইভাবে বাসা-বাড়ির সামনেও বর্জ্য পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ও দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অভিযানের বিষয়ে একমত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সিডিএ কনফারেন্স হলে এ সভা হয়। সভায় চসিক ও সিডিএর প্রকৌশলী এবং নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক বক্তব্য রাখেন।
সভায় বক্তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে নগরে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, বহদ্দারহাট থেকে মুরাদপুর হয়ে জিইসি এলাকা এবং আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকাকে সবসময় জলাবদ্ধতামুক্ত রাখার প্রস্তাব দেন চেম্বার সভাপতি। এজন্য করণীয় ঠিক করে তা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়। এছাড়া স্থানীয় কাউন্সিলর ও চসিক প্রকৌশলীদের পর্যবেক্ষণ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে আমলে নেয়ার প্রস্তাব দেন মেয়র। নগরের বিভিন্ন খালে নির্মাণাধীন স্লুইচ গেটের কাজ শেষে তা রক্ষণাবেক্ষণে এখন থেকেই জনবল কাঠামো তৈরি করে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে চসিকের প্রতি অনুরোধ জানায় সিডিএ। প্রকল্পের সুফল লাভে চসিক-সিডিএর মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিতেও সবাই একমত হয়েছেন। সভায় জানানো হয়, জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতায় ১২টি খালকে ঘিরে কর্মযজ্ঞ চলতি বছর শেষ হয়ে যাবে।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, খাল-নালায় ময়লা-আবর্জনা না ফেলার জন্য জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এতে অল্পসংখ্যক লোক অসন্তুষ্ট হলেও শহরের অধিকাংশ বাসিন্দা খুশি হবেন।
মেয়র খালের মুখে নিমার্ণাধীন রেগুলেটর সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সাময়িক পাম্পিং করে পানি নিষ্কাশনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, শহরের অধিকাংশ পাহাড় বালি দ্বারা গঠিত। তাই নালার প্রবেশ মুখে সিল্টট্রাপ স্থাপন করা যায় কিনা পরীক্ষা করে দেখা উচিত।
মেয়র বলেন, অনেকে খালের রিটেইনিং ওয়াল দখল করে বাড়ি নির্মাণ করছে। তা বন্ধ করতে হবে। পাহাড় কাটা বন্ধেও আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা হারানো, অতীতের ন্যায় জলাধারের অভাব, খাল, নালা-নর্দমা ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ ও অবৈধ দখলের ফলে জলাবদ্ধতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরএস খতিয়ান অনুযায়ী পুরানো খালগুলো উদ্ধার করতে হবে। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে সেবা সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। উদ্ধারকৃত খালের রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি উল্লেখ করে চসিক ও সিডিএর প্রকৌশল বিভাগ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেন তিনি।
সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সুফল মিলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, চলমান প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে তা সিটি কর্পোরেশনের নিকট হস্তান্তর করা হবে। এক্ষেত্রে কর্পোরেশনের পক্ষে স্লুইস গেটসহ খাল রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের অনুরোধ জানান। চাক্তাই, রাজাখালী, মহেশখাল ইত্যাদি খালে স্লুইস গেট নির্মাণ সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম শহর জলাবদ্ধতা মুক্ত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, ২ নং গেট, মুরাদপুর ও বহদ্দারহাটে যেন বর্ষার পানি না জমে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, প্রতি বছর জলাবদ্ধতার কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গুদামের মালামাল পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। কোটি কোটি টাকার আর্থিক লোকসান গুণতে হয়। কাজেই সেখানে যেন পানি না ওঠে তার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে ব্যবসায়ীরা এমনিতে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই এ বর্ষা মৌসুমে যেন জলাবদ্ধতা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদী বাঁচলে চট্টগ্রাম বন্দর বাঁচবে, চট্টগ্রাম বন্দর বাঁচলে দেশ বাঁচবে। প্রায় কয়েক মিটার গভীর পলিথিন স্তরের কারণে কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে জলাবদ্ধতার কারণে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ-আছদগঞ্জ-কোরবানীগঞ্জ পাইকারি বাজার এলাকায় শত শত কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা শংকিত। তিনি প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ, নালা-নর্দমায় ময়লা আবর্জনা না ফেলতে জনগণকে সচেতন করা এবং সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয় নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি গত দু’বছরে প্রকল্পের কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে এবং চলতি বছরে কতটুকু অগ্রসর হবে তা জনগণকে অবহিত করতে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, ৫২ কি.মি. সেকেন্ডারি অথবা টারশিয়ারি ড্রেন নতুনভাবে নির্মাণ বা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এসব ড্রেন নির্মাণ, সম্প্রসারণ ও সংস্কারের আওতায় ইতোমধ্যে ২৬ দশমিক ২৭ কি.মি. নতুন ড্রেন নির্মাণ ও সম্প্রসারণ কাজ শেষ করা হয়েছে। শেষ হওয়া ২৬ দশমিক ২৭ কি.মি. নতুন ড্রেন সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর পূর্বক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার কাজ চলমান রাখার প্রস্তাব করেন তিনি।
তিনি বলেন, ডিপিপিতে অর্ন্তভুক্ত ব্রিজসমূহের সবগুলোর কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। খাল-নালাসমূহ পরিষ্কার করা হলেও কিছু দিনের মধ্যে জনসাধারণের ময়লা ফেলার কারণে তা পুনরায় ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে জনসাধারণকে সচেতন করার চলমান কার্যক্রমকে আরো বেগবান করার জন্য সিটি মেয়রকে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, বার মাসে বছর হলেও সাত-আট মাসের বেশি সময় কাজ করা যায় না। তাই খাল সমূহ সংস্কার ও সম্প্রসারণের পাশাপাশি শহরের মধ্যে স্থিত ড্রেন সমূহের পানি খালে নামানোর লক্ষ্যে সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি ড্রেনের নির্মাণ, সম্প্রসারণ, সংস্কার কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হচ্ছে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিডিএ বোর্ড সদস্য মো. জসিম উদ্দিন শাহ, কেবিএম শাহ জাহান, স্থপতি আশিক ইমরান, এম আর আজিম, সিডিএ সচিব মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম খান, মেগা প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ মঈনুদ্দিন।