চট্টগ্রাম

রেমিট্যান্স আসে না প্রবাসী ব্যাংকে, নেই চেক বইও


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

হাটহাজারী ফতেয়াবাদ এলাকার বাসিন্দা কাতার প্রবাসী এরশাদুল আলম চৌধুরী’র সহধর্মিণী হিরা আক্তার। আত্মপ্রত্যয়ী এ নারীর নগরীর জিইসি মোড়ে ইউনেস্কো সেন্টারে একটি বুটিক হাউস রয়েছে। চলতি বছরের জুলাইতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তিনি ফ্যাশন হাউসে পূঁজি বাড়ান। তার মতো আরেক ওমান প্রবাসী সীতাকুণ্ড কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা শ্যামল চন্দ্র দাশের স্ত্রী কনিকা দাশও একই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নগরীর নাসিরাবাদ হিলভিউ এলাকায় একটি সুপারশপের ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছেন। এ দুই প্রবাসীর সহধর্মিণী হিরা আক্তার ও কনিকা দাশের মতো অসংখ্য নারী ‘প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক’ চট্টগ্রাম শাখা থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছেন, আনছেন পারিবারিক সচ্ছলতা। শুধু নারী নয়, প্রবাসীদের মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী যে কেউ কর্মসংস্থানের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ’ এর আওতায় লোন নিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখা থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫৯৪ জন ঋণ নিয়েছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সাফল্যের গল্পগাথা যেমন রয়েছে, উল্টোপিঠে রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতাও। প্রবাসীদের কল্যাণে ২০১২ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হলেও গত নয় বছরে ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আসার কোন সুযোগ সৃষ্টি করা হয়নি। নেই লেনদেনের জন্য ব্যাংকের নিজস্ব কোন চেক বই। চলে না চেকের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনও। এ ব্যাংকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো কার্যক্রম নেই। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক লেনদেনের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু এখনো বাণিজ্যিক ব্যাংকে রূপান্তর করা যায়নি। এছাড়াও ঋণ গ্রহীতাদের ব্যাংক ঋণের কিস্তি অনলাইনে পরিশোধের সুযোগ নেই। সরাসরি ব্যাংকে এসে পরিশোধ করতে হয়। ফলে দুর্ভোগের শিকার হন ঋণ গ্রহীতারা।
প্রবাসীরা জানায়, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে প্রবাসীদের হিসাব খোলার নিয়ম নেই। এ কারণে প্রবাসীরা এ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারে না। শুধু তাই নয়, ঋণ গ্রহীতা প্রবাসীদের অনলাইনে কিস্তি পরিশোধের কোন ব্যবস্থা নেই। এ কারণে তারা সরাসরি বিদেশ থেকে ঋণের টাকা শোধ করতে পারে না। একই সাথে দেশের দূর-দূরান্তের গ্রাহকদের কিস্তির টাকা অনলাইনে জমা দেওয়ার সুযোগ নেই। সরাসরি ব্যাংকে এসে কিস্তির টাকা জমা দিতে হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন প্রবাসীর স্বজনরা।
সূত্র জানায়, অভিবাসীদের দুইভাবে ঋণ দেয় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। নতুন ভিসার বিপরীতে যারা প্রথম বিদেশ যায় তাদের সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা এবং যেসব প্রবাসী পুনরায় বিদেশে গেলে তাদেরও বিমান টিকেটের বিপরীতে জামানতবিহীন সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এছাড়াও রয়েছে পুনর্বাসন ঋণ। বিদেশ থেকে ফেরত আসার পর দেশে যেকোন ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ঋণ দেওয়া হয়। জামানত ছাড়া তিন লাখ এবং ব্যবসার পরিধি বড় হলে ৯ থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত ঋণ পায় প্রবাসীরা। তবে তিন লাখ টাকার বেশি ঋণ নিলে জামানত দিতে হয়। এছাড়া যেসব প্রবাসী ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারির পরে চাকরিচ্যুত হয়ে দেশে আসে তাদের কর্মসংস্থানের জন্য ৪ শতাংশ সুদে বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ দেয় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক।
প্রবাসী ছাড়াও সাধারণ জনগণের জন্যে ঋণ দেয় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। তবে এ ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়া হয় মোট টার্গেটের ২০ শতাংশ। এতে জামানত দিতে হয় ঋণের তিনগুণ।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের চট্টগ্রামে শাখা রয়েছে ৪টি। শাখাগুলো হচ্ছে নগরীর চট্টগ্রাম শাখা, রাউজান, হাটহাজারী ও সন্দ্বীপ শাখা।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক চট্টগ্রাম শাখা পুরো চট্টগ্রাম শহর, দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা এবং সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলা। রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ার প্রবাসীরা রাউজান শাখায়, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি প্রবাসীরা হাটহাজারী শাখা এবং স›দ্বীপের প্রবাসীরা সন্দ্বীপ শাখা থেকে ঋণ নিতে পারে।
জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখার ম্যানেজার সুমন কান্তি দেব বলেন, ‘প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে ঋণ দিচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। এ শাখা এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৯৪ জনকে ঋণ দিয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শুধু অভিবাসী ঋণ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্যখাতে ঋণ দেওয়া শুরু হয় ২০২০ সালের জুলাই থেকে। আমরা এ পর্যন্ত ঋণ দিয়েছি প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। প্রতিমাসে গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ জনকে ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়।’