চট্টগ্রাম

হাসপাতালে ভর্তির তিনদিনের মধ্যেই মারা যাচ্ছে ৭৮% রোগী


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

রিয়া মনি। ৬ বছর বয়সী এ শিশু জ্বরে আক্রান্ত হয় গত ১১ আগস্ট। প্রথম ক’দিন বাসায় চিকিৎসাধীন থাকলেও শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায় গত ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। কিন্তু ততদিনে রিয়া মনির শরীরে বাসা বাঁধে ডেঙ্গু। অবস্থার এতই অবনতি হয় যে ছোট্ট রিয়া মনিকে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গেই আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা শুরু করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তার আগেই রিয়ার ফুসফুস ও লিভারসহ অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি তাকে। হাসপাতালে ভর্তির মাত্র ৭২ ঘণ্টার আগেই মৃত্যু হয় রিয়া মনির। একই পরিস্থিতির শিকার মাত্র ৬ মাস বয়সী শিশু রুবেল মিয়া। ডেঙ্গু-আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মাত্র তিন দিনের মাথায় মৃত্যু হয় এ শিশুর। তবে রুবেলের চেয়ে একদিন কম সময় পান পুলিশ সদস্য এমদাদুল। হাসপাতালে ভর্তির মাত্র দ্বিতীয় দিনের মাথায় মারা যান তিনি। রিয়া, রুবেল আর এমদাদুল- তারা দুই থেকে তিনদিন পর্যন্ত সময় পেলেও একদিনও সময় পাননি তৃষ্ণা রানী রায়। হাসপাতালে ভর্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ডেঙ্গু আক্রান্ত এ নারী।

আলোচ্য এ চারজনই নন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মৃত্যু হওয়া রোগীদের মধ্যে ৭৮ শতাংশই মারা গেছেন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কয়েক ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ তিন দিনের মধ্যেই। যাদের বেশি অংশই হচ্ছে শিশু-কিশোর। ডেঙ্গুতে মৃত্যু হওয়াদের তালিকা পর্যালোচনা করে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে- চলতি বছরের মৃত্যুর সংখ্যা ইতোমধ্যে গত ৩ বছরের রেডর্ক ভেঙেছে। অবশ্য, এ বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর বাড়ার কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগসহ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- মারা যাওয়া রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কারণেই দ্রুতই শারীরিক অবনতি ঘটছে। তাতে রোগীদের মধ্যে জটিলতা ও মৃত্যুর ঘটনা- দুটোই বাড়ছে। যারা মারা যাচ্ছেন-  তাদের সিংহভাগই ‘ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম’ ও ‘হেমোরেজিক ফিভার’এর কারণে মারা গেছেন বলে মৃত্যুর তথ্যে উল্লেখ করা হয়। তাই ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুতই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের পাশাপাশি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৯ জনের মৃত্যু ঘটে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার এক থেকে ৩ দিনের মধ্যে। যা শতকরায় ৭৮ শতাংশ। এরমধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রথম দিনে ১৫ জন বা ৩০ শতাংশ, দ্বিতীয় দিনে ১৩ জন বা ২৬ শতাংশ এবং তৃতীয় দিনে ১১ জন বা ২২ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়। এক থেকে তিন দিনের মধ্যে মৃত্যু হওয়া এসব রোগীর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই হচ্ছে শিশু-কিশোর।

মৃত্যুর কারণ নিয়ে যা বললেন চিকিৎসকরা :

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুর রব মাসুম বলেন, অনেকে জানেন না কখন রোগ পরীক্ষা করাতে হবে। পরীক্ষা না করে তাঁরা বসে থাকেন। অনেকে জ¦র হলে পাত্তা দেন না। কিংবা আমলেও নেন না। পাড়া মহল্লার ফার্মেসির দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে থাকেন। এসব কারণে রোগ ভালো হয় না। শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেলে তারপর হাসপাতালে আসেন। তখন এসব রোগীদের বাঁচানো কষ্টকর হয়ে ওঠে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, বেশিরভাগ রোগীই দেরিতে হাসপাতালে আসছেন। এসব রোগীরা যদি যথাসময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাহলে জটিলতা কম হতো। কিন্তু যারা আসছেন তাদেরমধ্যে প্লাটিলেট কম পাওয়া, বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ না করা, ডেঙ্গুর পাশাপাশি কিডনি, হার্ট ডিজিজ, লিভার, ফুসফুস-সহ অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের বেশিরভাগ জটিলতার কারণে মৃত্যু ঘটছে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, শুরু থেকেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা করে আসছি। বারবার এ নিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। বিভিন্নভাবে প্রচার প্রচারণাও চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবুও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেয়া হলেও বেশিরভাগ রোগীই দেরিতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে। আবার অনেক ক্ষেত্রেই রোগীরা সময়মতো নমুনা পরীক্ষাও করাচ্ছে না। তাই পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। যারা মারা গেছেন, তাদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। দেরিতে ভর্তি হওয়ার কারণে মাল্টি অর্গান ফেইলিউর হয়ে মৃত্যু ঘটছে।

যেসব লক্ষণ থাকলে ভর্তি হতে হবে হাসপাতালে : হাড়ের জয়েন্টে ব্যাথা কিংবা গা-হাত পায়ে ব্যাথা, প্রচণ্ড জ্বর, গায়ে র‌্যাশ, বমি আর মাথা ব্যাথা, এই সবকটি উপসর্গ থাকলে বুঝতে হবে আপনার ডেঙ্গু হলেও হতে পারে। এছাড়াও ডেঙ্গু আরও কিছু উপসর্গ রয়েছে- যার মধ্যে মুখ আর নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ কিংবা প্রশ্রাবের সাথে রক্তক্ষরণ, প্লাটিলেট কমে যাওয়া, শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হওয়া, চামড়ায় কালো কালো ছোপ দেখা দেওয়া এবং পেটে অসম্ভব ব্যথা হওয়াটাও ডেঙ্গুর লক্ষণ।