জাতীয়

চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ভয়ংকর ভূমিকম্প হতে পারে- বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

যে কোনো সময় চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভয়ংকর ভূমিকম্প হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন- ভারতীয় ও বর্মী এই দুটো টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান হওয়ায় সিলেট-চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে কয়েক শ বছর ধরে প্রচুর পরিমাণে শক্তি সঞ্চিত হয়ে আসছে- যার ফলে বড় ধরনের একটি ভূমিকম্প যে কোনো সময়ে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে।

তবে সেটি কবে হতে পারে তার সুনির্দিষ্ট সময় বলা কঠিন।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলছেন, যে কোনো সময়ে এটা হতে পারে। আগামী ১০ বছরে হতে পারে আবার ৫০ বছরের মধ্যেও হতে পারে। আমরা শুধু জানি এই সঞ্চিত শক্তি এক সময়ে বের হবেই – এর কোন বিকল্প নাই।

তবে ভূমিকম্প কোথায় হতে পারে আমরা তার স্থান নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছি। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভূমিকম্প অবধারিত।

ঢাকা শহরে মাঝে মধ্যেই ভূকম্পন অনুভূত হয় যার উৎস বাংলাদেশের বাইরে এবং এই শহর থেকে ২০০/৩০০ কিলোমিটার দূরে।

সম্প্রতি যেসব ভূমিকম্প হয়েছে সেগুলোর এপি সেন্টার বা মূল কেন্দ্র ছিল পূর্ব দিকে মিয়ানমার অথবা ভারতের মিজোরাম, মনিপুর এবং উত্তরে আসাম, নেপাল কিম্বা ভুটানে।

নেপালে ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে রাজধানী কাঠমান্ডুর বহু বাড়িঘর ধসে পড়ে।

তবে আজকের যে বাংলাদেশ, সেই ভূখণ্ডে অতীতে ছোট বড় সব ধরনের ভূমিকম্পই আঘাত হেনেছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিশেষ করে চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভূমিকম্পের যে উৎস রয়েছে তাতে গত এক হাজার বছরের মধ্যে বড় মাত্রার ভূমিকম্প না হওয়ার কারণে এখন যে কোনো সময়ে এটি আঘাত করতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের প্রধান উৎস দুটো।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ হুমায়ুন আখতার বলছেন একটি উৎস ‘ডাউকি ফল্ট’ শিলং মালভূমির পাদদেশে ময়মনসিংহ-জামালগঞ্জ-সিলেট অঞ্চলে বিস্তৃত যা প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ।

‌‘এই ফল্টের পূর্ব প্রান্তে অর্থাৎ সিলেটের জৈন্তাপুর অঞ্চলে ভূমিকম্পের আশংকা খুব বেশি। আরেকটি উৎস হচ্ছে সিলেট থেকে ত্রিপুরা হয়ে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, টেকনাফ পর্যন্ত। এই উৎসটি খুব ভয়ংকর,’ বলেন তিনি।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ‘টেকটনিক প্লেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান তাতে দুটো প্লেটের সংযোগস্থল এই পাহাড়ি অঞ্চল যাকে ভূতাত্ত্বিক ভাষায় সাবডাকশন বলা হয়। পশ্চিমের প্লেটটি ভারতীয় প্লেট এবং পূবের পাহাড়ি অঞ্চলটি বার্মা প্লেট। ভারতীয় প্লেটটি বার্মা প্লেটের নিচে অর্থাৎ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে।’

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সাবডাকশন জোনে প্রতিনিয়ত শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে। গত কয়েক শ বছর ধরে সেখানে প্রচুর শক্তি ইতোমধ্যে জমা হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যেকোনো সময়ে বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে।
দুটো প্লেটের পরস্পরমুখী গতির কারণে এই শক্তি তৈরি হয়।

‘পশ্চিমের ভারতীয় প্লেট পূব দিকে চলে যাচ্ছে আর পূবের বার্মা প্লেট পশ্চিমে ধাবিত হচ্ছে। পরস্পরমুখী এই গতির কারণে প্লেটের অভ্যন্তরে এই শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে,’ বলেন আখতার।

গবেষকরা বলছেন, প্রতি ১০০ বছরে দেড় মিটার সংকোচন ঘটছে যার ফলে এই অঞ্চলে গত এক হাজার বছরে ১৫ মিটারের মতো সংকোচন হয়েছে অর্থাৎ ১৫ মিটার স্থান চ্যুতি ঘটাতে সক্ষম এরকম শক্তি জমা হয়েছে।

এই সাবডাকশন অঞ্চলের পূর্ব প্রান্তে প্রায়শই ভূমিকম্প হয়। এখানে সঞ্চিত শক্তি পাঁচ থেকে ১০ বছর পর পর বের হয়ে যায় এবং এর মাত্রা থাকে পাঁচ থেকে ছয়। সবশেষ যে ভূমিকম্প হয়েছে তারও কেন্দ্র ছিল মিয়ানমারে।

সাবডাকশন অঞ্চলের পশ্চিম প্রান্তে ‘বাংলাদেশের ভেতরে যে ভূমিকম্পের উৎস তাকে বলা হয় লক জোন। প্রচণ্ড সংঘর্ষের কারণে এখানে প্রচুর শক্তি জমা হয়ে আছে। সঞ্চিত শক্তি যখন ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে যাবে তখন সেখানে ভয়াবহ রকমের ভূমিকম্প হবে,’ বলেন হুমায়ুন আখতার, যিনি প্রায় দুই দশক ধরে ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণা করছেন।

তিনি বলছেন, এর মাত্রা হতে পারে রিখটার স্কেলে ৮.৫ থেকে ৯.২ পর্যন্ত।

তবে এই সঞ্চিত শক্তি একবারেও বের হতে পারে আবার ধীরে ধীরেও বের হতে পারে।

বাংলাদেশের এই অঞ্চলে এর আগেও বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। তবে সেগুলো ছিল সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এই দুটো উৎসের বাইরে।

এধরনের ভূমিকম্পে ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ বদলে গেছে, ১৭৯৭ সালে। এখনকার মেঘনা নদী এক সময় লালমাই পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে প্রবাহিত হতো। বড় ধরনের ভূমিকম্পের ফলে এই নদীর গতিপথও পরিবর্তিত হয়ে ২০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে বর্তমান অবস্থানে সরে আসে।

১৭৬২ সালে টেকনাফ থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে সেন্টমার্টিন দ্বীপ তিন মিটার উপরে উঠে আসে। সিলেটের মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ এই অঞ্চলে ১৯২২ সালে হয়েছিল ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প। এর আগে ১৮৬৮ সালে ঐ অঞ্চলে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। সূত্র: বিবিসি