জাতীয়

চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে অপরিপক্ব তরমুজ


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

তরমুজ নিয়ে কয়েক বছর ধরে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে চলছে এক ধরনের অসন্তোষ। খুচরা বিক্রেতারা পিস হিসাবে কিনে বিক্রি করছেন কেজি দরে। এ নিয়ে প্রায়ই ক্রেতার সঙ্গে তাদের বচসা হতে দেখা যায়। গত কয়েক বছরেও এ বিষয়ে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি বাজারসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এদিকে রমজান মাস ঘিরে এরই মধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে রসালো ফল তরমুজ। তবে এসব তরমুজের বেশির ভাগই অপরিপক্ব। কারণ এখনো তরমুজের পরিপূর্ণ মৌসুম শুরু না হলেও রমজানে বেশি লাভের আশায় কৃষকরা অপরিপক্ব তরমুজ বিক্রি শুরু করছেন। এসব ফলের রঙ ও স্বাদ অনেক কম। তারপরও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে ফলটি।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৩ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত ওজনের তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। ছোট তরমুজের দাম একটু কম। এ ছাড়া বিভিন্ন বাজার, পাড়া ও মহল্লার মোড়ের দোকানে ছোট ও মাঝারি আকারের তরমুজ বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। ভালো মানের প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বিক্রেতার বলছেন, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে পুরোদমে তরমুজের মৌসুম শুরু হবে। তখন দাম কিছুটা কমবে।

ফার্মগেট এলাকায় কথা হয়ে রাসেল নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতি কেজি তরমুজ ৮০ টাকা অনেক বেশিই। আড়ত থেকে তারা পিস হিসাবে কিনে কেজিতে বিক্রি করবে কেন? সরকারকে এগুলো দেখতে হবে। এ দেশের মানুষ ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। তাজুল নামে আরেক ক্রেতা বলেন, একটা ছোট সাইজের তরমুজের ওজন হয়েছে সাড়ে তিন কেজি। ৮০ টাকা কেজিতে দাম এসেছে ২৮০ টাকা। কিন্তু এই তরমুজের দাম কোনোভাবেই ১৩০ টাকার বেশি হওয়ার কথা না। ভালো হতো পিস হিসাবে কিনতে পারলে। দেশের জনগণকে নিয়ে ব্যবসায়ীরা তামাশা শুরু করেছেন। এসব দেখার যেন কেউ নেই দেশে।

ফার্মগেট এলাকার খুচরা ফল বিক্রেতা দীপু খন্দকার বলেন, গতবার এ সময় যে ১০০ তরমুজ ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকায় আড়ত থেকে কেনা যেত, এবার তা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। আমাদের আরও খরচ আছে। সেগুলো যোগ করে খুচরায় ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, তিন কারণে বেড়েছে তরমুজের দাম। তার মধ্যে অন্যতম হলো চাঁদা। তরমুজের গাড়িপ্রতি বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বা আনসার সদস্যদের সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা দিতে হয়। প্রতি পিস তরমুজ খালাস করতে লেবারদের দিতে হয় ৫ টাকা। দ্বিতীয়ত পরিবহন ভাড়া। বরগুনা কিংবা পটুয়াখালী থেকে এক গাড়ি তরমুজ আনতে আগে যেখানে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা ছিল, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ২৭ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার ও বাদামতলী থেকে খুচরা বাজারে আনতে গেলেও বেশি ভাড়া, পথে স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নামে চাঁদা, বাজারের চাঁদা ও পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাঁদা দিতে হয়। এ ছাড়া রয়েছে হাসিল খরচ, তৃতীয় লিঙ্গের চাঁদাসহ আরও অনেক রকমের চাঁদা দিতে গিয়ে খরচ বেড়ে যায় বলে জানান আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।

এদিকে দেশে বিশেষ করে বরিশাল অঞ্চল- পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা ও ঝালকাঠিতে প্রচুর পরিমাণে তরমুজ চাষ হয়। সাম্প্রতিক সময়ে খুলনার কয়রাসহ দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজের ভালো ফলন হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানেও তরমুজের আবাদ হচ্ছে।

ভোলার চরফ্যাশনের তরমুজচাষি নুরনবী জানান, প্রতি একর জমিতে এবার খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। বাজার দর এবং আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করছে লাভ-লোকসান। এখনো সেভাবে তরমুজের মৌসুম শুরু হয়নি। আরও কিছু দিন লাগবে। তবে রমজান মাসের কারণে তরমুজের চাহিদা ভালো। দামও বেশি পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে তরমুজ কিছুটা অপরিপক্ব। তবে ভালো দামে পাইকাররা ক্ষেত থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছে। মাঝারি সাইজের তরমুজের শত ৮ থেকে ১০ হাজার এবং বড় সাইজ ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুলনার কয়রা উপজেলার বিকাশ চন্দ্রও একই জানান।

কৃষি বিভাগ বলছে, দেশে তরমুজ সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে ওঠে। এটাই তরমুজের প্রধান মৌসুম। কিন্তু সম্প্রতি বাজারে এ সময় ছাড়া অন্য সময়েও তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে মে থেকে সেপ্টেস্বর পর্যন্ত এ তরমুজ বেশি পাওয়া যায়। এ তরমুজকে অনেকে নাম দিয়েছেন ‘বারোমাসি তরমুজ’। তরমুজগুলো অসময়ে ওঠার কারণে চাষিরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। কোনো স্থানে হলুদ রঙের খোসার অমৌসুমি তরমুজেরও চাষ হচ্ছে। দিন দিন অমৌসুমে তরমুজ চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। হবিগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, মৌলভীবাজার, ভোলা প্রভৃতি জেলায় কিছু কৃষক ইতোমধ্যে এই বারোমাসি তরমুজ চাষ করছেন।