চট্টগ্রাম

পুলিশের পুরস্কার ‘টোকেনবাজি’


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত যাওয়ার একটা টোকেনের ব্যবস্থা করে দেন। সাংবাদিকের নামে অনেক ট্যাক্সি চলছে।’ এ প্রতিবেদকের কাছে এমন আবদার করেন বোয়ালখালীর গোমদণ্ডীর এলাকার সিএনজি ট্যাক্সি চালক মো. বাবুল।
বাবুলের কথার সত্যতা পাওয়া যায় নগরীর অন্যতম প্রবেশপথ কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায়। দেখা যায়, স্টেশনে ১০-১৫টি ট্যাক্সি পার্কিংয়ে রয়েছে। ট্যাক্সির সামনে লাল রঙের বড় হরফে ‘PRESS’ লেখা রয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন
সংবাদপত্রের নামে স্টিকার সাঁটানো। তবে বেশির ভাগ টোকেন হচ্ছে হান্নান তালুকদারের নামে।

গত সোমবার বিকেল ৫টায় সরেজমিনে দেখা যায়, সাংবাদিক হান্নান রহিম তালুকদার ট্যাক্সি স্টেশন এলাকায় ৬-৭ জন সঙ্গী-সাথী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ট্যাক্সিচালক ও স্থানীয় দোকানদাররা বলেন, উনি সাংবাদিক। এখন তার নামে চলে সিএনজি ট্যাক্সি। বেশির ভাগ ট্যাক্সির পেছনে বড় অক্ষরের সাংবাদিক লেখা। তাতে হান্নান তালুকদারের নাম ও মোবাইল ফোন নাম্বার রয়েছে।
গত মঙ্গলবার সোয়া ৪টার দিকে ট্যাক্সি মালিক হিসেবে টোকেনের জন্য কথা হয় হান্নান তালুকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতি ট্যাক্সি তিন হাজার টাকা করে নিই। বোয়ালখালী থেকে নগরীর বহদ্দারহাট চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা (বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার পর্যন্ত) চলাচল করতে পারবে।’ টাকা তো বেশি হয়ে যাচ্ছে। আগে তো ৫শ-এক হাজার টাকায় টোকেন নিতাম। এমন প্রশ্নের জবাবে হান্নান বলেন, ‘তিন হাজার টাকার অর্ধেক আমি পাই। আর অর্ধেক ট্রাফিক পুলিশকে দিতে হয়। আমি বেশি গাড়ির টোকেন দিই না।’ পুলিশ মামলা দেবে না তো-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মামলা দিলে ১৫শ টাকা দিতে হবে। তাছাড়া কেউ মামলা দেবে না। ওটা আমার এলাকা।’ একাধিক সূত্র জানায়, হান্নান তালুকদারের টোকেন ছাড়া কাপ্তাই রাস্তার মাথায় পৌঁছলেই মামলা ঠুকে দেয় ট্রাফিক পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে, হান্নানের মাধ্যমে কৌশলে টোকেন দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। দিনে দিনে বাড়ছে সাংবাদিকের নামে টোকেন-বাণিজ্য। আলোকিত দেশ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক কল্যাণ এসোসিয়েশন, সিএনএন পত্রিকা বা অনলাইনের নামে স্টিকার সাঁটানো রয়েছে।
বোয়ালখালী থেকে নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথা রুটে টোকেনের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে ট্যাক্সির চলাচল ছিল। চলে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য। দুই মাস তা বন্ধ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের ভাগবাটোয়ারা দ্বন্দ্বে বন্ধ রয়েছে টোকেন-প্রথা। তবে কথিত সাংবাদিকেরা মিলে ফের শুরু হয়েছে টোকেন-বাণিজ্য। বিভিন্ন সাংবাদিকদের নামে অন্তত শতাধিক ট্যাক্সি চলাচল করছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ট্রাফিকের চান্দগাঁও থানার টিএ আশিষ পালের মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. হাসান আলী বলেন, ‘টোকেন বাণিজ্যের কোনো সুযোগ নেই। প্রতিনিয়ত গ্রাম ট্যাক্সি আটক করা হচ্ছে। কেউ সুবিধা নিতে পারছে না। সেখানে টাকা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ সাংবাদিকের টোকেনে বহদ্দারহাট এলাকা পর্যন্ত গ্রাম ট্যাক্সি চলাচলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রাম ট্যাক্সি শহরে ঢোকার সুযোগ নেই। কাপ্তাই রাস্তার মাথায় আমাদের চেকপোস্ট রয়েছে। গ্রাম গাড়ি ঢোকার বিষয়ে কড়া নির্দেশনা রয়েছে। তবে ফাঁক-ফোকর গলে লুকিয়ে দু-একটি আসতে পারে। এতে আমাদের কারো সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। থাকার সুযোগও নেই।’
হান্নান তালুকদারের দেওয়া টোকেন সংগ্রহে রয়েছে

কাছে। তাতে লিখা আছে, ‘সুপ্রিয় আমার এই গাড়িটি নিউজের কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই গাড়িটি চলার পথে সবার সার্বিক সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি।’
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কথা হয়েছে হান্নান তালুকদারের সঙ্গে। টোকেন বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার নিজের পাঁচটি সিএনজি ট্যাক্সি রয়েছে। ডকুমেন্ট আছে। টোকেন বাণিজ্য করি না।’ তবে পরক্ষণে বলেন, ‘ভাই অফিসে আসেন। মোবাইল নাম্বার দেন। বসে কথা বলব।’
হান্নান তালুকদার নিজেকে ‘চট্টগ্রাম সংবাদ’ পত্রিকার পরিচয় দেন। সিএসটিভি টুয়েন্টিফোর নামে একটি অনলাইনের চেয়ারম্যানও।
সিএসটিভি, চট্টগ্রাম সংবাদ ও হান্নান রহিম তালুকদারের ফেসবুক ফেইজ ঘেঁটে দেখা যায়, বেশির ভাগই হচ্ছে পুলিশ সংবাদ। পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত ও গুণ-কীর্তন আর দখল-বেদখল, চটকদার সংবাদই বেশি। এছাড়াও হান্নান রহিম বিএনপির সভা-সমাবেশে উপস্থিতি ও নেতাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সংবাদ-ছবি রয়েছে তার ফেসবুক পেজে ছবি আপলোড রয়েছে। কাপ্তাই রাস্তার মাথার টোকেন বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে আসছে চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটো ট্যাক্সি শ্রমিক ইউনিয়ন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘টোকেন বলতে কোনো শব্দ নেই। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শ্রমিকদের কল্যাণে মাসে পাঁচশ টাকা চাঁদা উত্তোলন করা হয়। শ্রমিকদের কল্যাণে তা ব্যয় হয়।’ তিনি বলেন, ‘টোকেন বন্ধ। কিন্তু কথিত সাংবাদিকের নামে কীভাবে গ্রাম ট্যাক্সি শহরে চলাচল করে আমাদের বোধগম্য নয়। কার ঈশারায় নগরে তা চলাচল করছে।’
হান্নান তালুকদার অনলাইন ও চট্টগ্রাম সংবাদে চান্দগাঁও, বাকলিয়া এলাকায় চলাচল করা অবৈধ ব্যাটারি রিকশার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করেছে। পরে চান্দগাঁও থানা ব্যাটারিচালিত রিক্সা মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি হন তিনি। তার নামসহ ৫ জনের স্বাক্ষরে অবৈধ ব্যাটারি রিকশার টোকেন দেওয়া হয়েছে। এসব টোকেন কালুরঘাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা সংলগ্ন মাজার গেট পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ব্যাটারি রিকশা। পুলিশের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে চান্দগাঁও থানা এলাকায় অবৈধ সিএনজি ও ব্যাটারি রিকশার টোকেন-বাণিজ্যে নেমেছেন কথিত সাংবাদিক হান্নান।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এসব ভূঁইফোড় সাংবাদিকদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে প্রকৃত সাংবাদিকদের মর্যাদাহানি হচ্ছে। ভূঁইফোড় সাংবাদিকদের আইনের আওতায় আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’